গুগল পে কি সত্যিই বাংলাদেশে আসছে?

May 29, 2025
Other
গুগল পে কি সত্যিই বাংলাদেশে আসছে?

বাংলাদেশে গুগল পে নিয়ে হইচই


বাংলাদেশে গুগল পে চালু হওয়ার গুজব নিয়ে অনেক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু আসল কথা হলো—গুগল পে নয়, বাংলাদেশে আসতে যাচ্ছে গুগল ওয়ালেট! যদিও অনেকে এই দুটো নামকে একই মনে করে, কিন্তু এদের কাজ সম্পূর্ণ আলাদা। তাই এটা বুঝে নেওয়া জরুরি যে, আসলে কী আসছে বাংলাদেশে।  


গুগল ওয়ালেট vs গুগল পে: পার্থক্যটা কী? 


নামে মিল থাকলেও গুগল ওয়ালেট আর গুগল পে এক জিনিস না—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের দেশগুলোতে। গুগল পে মূলত পিয়ার-টু-পিয়ার পেমেন্টের জন্য, অর্থাৎ এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তির কাছে টাকা পাঠানো বা ব্যাংক ট্রান্সফারের সাথে সম্পর্কিত। অন্যদিকে, গুগল ওয়ালেট হলো একটি ডিজিটাল ওয়ালেট অ্যাপ, যেখানে আপনি আপনার কার্ড, আইডি, বোর্ডিং পাস, ট্রানজিট টিকেট স্টোর করতে পারবেন এবং এনএফসি-সাপোর্টেড টার্মিনালে ট্যাপ করে পেমেন্ট করতে পারবেন।  

কিছু দেশে গুগল এই দুটো সার্ভিসকে এক অ্যাপে নিয়ে এসেছে, কিন্তু বাংলাদেশের মতো জায়গায় ওয়ালেট আর পে আলাদা থাকবে। তাই গুগল ওয়ালেট চালু হলেও আপনি bKash-এর মতো টাকা পাঠাতে পারবেন না—কিন্তু কন্টাক্টলেস পেমেন্ট এবং ডিজিটাল আইটেম স্টোর করার সুবিধা পাবেন।  

বাংলাদেশের জন্য গুগল ওয়ালেট কেন গুরুত্বপূর্ণ?


গুগল ওয়ালেটের আগমন বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য একটি বড় পদক্ষেপ। এন্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা এখন তাদের ফোন দিয়ে এনএফসি টার্মিনালে পেমেন্ট করতে পারবেন, ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড স্টোর করতে পারবেন, এমনকি বোর্ডিং পাস বা ট্রানজিট টিকেটও ম্যানেজ করতে পারবেন—সবই গুগলের সুরক্ষিত সিস্টেমে। ভবিষ্যতে এখানে ডিজিটাল আইডি কার্ড বা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ইন্টিগ্রেশনও যুক্ত হতে পারে, যা ইতিমধ্যে অন্য কিছু দেশে চালু হয়েছে।  

এছাড়াও, এই সুবিধা বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও ব্যাংকগুলোকে এনএফসি-সাপোর্টেড পয়েন্ট অফ সেল (POS) সিস্টেম ব্যবহারে উৎসাহিত করবে, যা পেমেন্টকে আরও দ্রুত, নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যসম্মত করবে—যা কোভিড-পরবর্তী সময়ে খুবই প্রাসঙ্গিক।  

এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে


সম্প্রতি বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আগামী এক মাসের মধ্যে বাংলাদেশে গুগল ওয়ালেট চালু হতে যাচ্ছে। প্রথমদিকে শুধুমাত্র সিটি ব্যাংক-এর গ্রাহকরা গুগল ওয়ালেট ব্যবহার করতে পারবেন। তারা তাদের ভিসা ও মাস্টারকার্ড (টাকায়) অ্যাপে যুক্ত করে এন্ড্রয়েড ফোন দিয়ে যেকোনো এনএফসি টার্মিনালে পেমেন্ট করতে পারবেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশের অন্যান্য ব্যাংকও এই সার্ভিসে যুক্ত হবে।  

গুগল ওয়ালেটে 'ট্যাপ টু পে' ব্যবহার করতে হলে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে:  

- আপনার ফোনে Near Field Communication (NFC) চালু থাকতে হবে।  
- আপনার পেমেন্ট মেথড (কার্ড) এমন একটি দেশ থেকে ইস্যু করতে হবে যেখানে গুগল ওয়ালেট সাপোর্টেড।  
- কন্টাক্টলেস পেমেন্টের জন্য গুগল ওয়ালেট কে ডিফল্ট পেমেন্ট অ্যাপ হিসেবে সেট করতে হবে।  

আন্তর্জাতিক পেমেন্ট ও সাপোর্টেড কার্ড 


অনেকেরই প্রশ্ন—গুগল ওয়ালেট কি আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সাপোর্ট করবে? উত্তর হলো, এটি নির্ভর করবে আপনার কার্ডের উপর। গুগল ওয়ালেট নিজে টাকা ট্রান্সফার করে না—এটি শুধু আপনার কার্ড স্টোর করে। যদি আপনার কার্ড ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক লেনদেন সাপোর্ট করে (যেমন ডুয়াল-কারেন্সি ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড), এবং আপনার ব্যাংক গুগলের সাথে পার্টনারশিপ করে, তাহলে আপনি বিদেশে বা আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইটে পেমেন্ট করতে পারবেন।  

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কোন ব্যাংক বা কার্ড সাপোর্ট করবে, তার কোনো অফিসিয়াল তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, এইচএসবিসি, ইস্টার্ন ব্যাংক বা সিটি ব্যাংক-এর মতো গ্লোবাল নেটওয়ার্কযুক্ত ব্যাংকগুলো প্রথম দিকে যুক্ত হবে। আপনার ব্যাংক যদি সাপোর্ট না করে, তাহলে কার্ড অ্যাড করলেও গুগল ওয়ালেটে কাজ করবে না।  

চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা 


বাংলাদেশে গুগল ওয়ালেট চালু করতে কিছু বাধাও আছে। bKash, Nagad-এর মতো লোকাল পেমেন্ট সার্ভিসগুলো এখনও ডিজিটাল লেনদেনে আধিপত্য বিস্তার করে আছে। এছাড়াও, শহরগুলোতে এনএফসি টার্মিনালের সংখ্যা এখনও সীমিত। আর বিদেশি ফিনটেক কোম্পানিগুলোর জন্য ডাটা লোকালাইজেশন ও লাইসেন্সিং-এর মতো রেগুলেটরি চ্যালেঞ্জও আছে।  

তবে সম্ভাবনাও কম নয়। ১৮ কোটিরও বেশি মোবাইল ব্যবহারকারী এবং ক্রমবর্ধমান স্মার্টফোন ব্যবহারের হার দেখে বোঝা যায়, ইউজার বেস বিশাল। গুগল যদি ওয়ালেটকে লোকাল ব্যাংক, ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম বা সরকারি ই-আইডি প্ল্যাটফর্মের সাথে যুক্ত করতে পারে, তাহলে দৈনন্দিন লেনদেনের পদ্ধতিতে বিপ্লব আসতে পারে।  

মার্কেট রেডিনেস 

এই ঘোষণা নিয়ে অনলাইনে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে—কিন্তু কিছু বিভ্রান্তিও আছে। অনেকেই ভাবছেন গুগল পে আসছে, কিন্তু পরে হতাশ হতে পারেন যখন বুঝবেন এটি আলাদা একটি সার্ভিস। তবে টেক-স্যাভি তরুণ প্রজন্ম নতুন ডিজিটাল টুল ব্যবহার করতে আগ্রহী। যেহেতু বাংলাদেশে এন্ড্রয়েড ফোনের প্রাধান্য বেশি, তাই ব্যাংক ও মার্চেন্টরা সাপোর্ট করলে গুগল ওয়ালেট দ্রুত জনপ্রিয় হতে পারে।  

আপনার জন্য এর মানে কী?  


তো, গুগল পে কি বাংলাদেশে আসছে? না, আসছে গুগল ওয়ালেট—এবং সেটাও কিন্তু বড় ব্যাপার! এটি bKash বা Nagad-এর মতো টাকা পাঠানোর সুবিধা দেবে না, কিন্তু ডিজিটাল পেমেন্ট, ট্রাভেল এবং সুরক্ষিত কার্ড স্টোরেজের জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। আন্তর্জাতিক ট্রানজেকশন ব্যাংক পার্টনারশিপের উপর নির্ভর করলেও, এটি বাংলাদেশের ডিজিটাল ইকোনমিকে আরও একধাপ এগিয়ে নেবে।  

সুতরাং, গুগল ও আপনার ব্যাংকের অফিসিয়াল ঘোষণার জন্য চোখ রাখুন। হয়তো খুব শীঘ্রই আপনি শপিং মলে ফোন ট্যাপ করেই বিল পরিশোধ করতে পারবেন!  

*২৯ মে, ২০২৫ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে লেখা। 

Hello Bazar